গত বছর র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির পৃথক অভিযানে অর্ধশত ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হলেও কোনোভাবেই যেন রোধ করা যাচ্ছে না এ রুটে ইয়াবা প্রবেশ।
জানা গেছে, বিয়ানীবাজার-জকিগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলার ভারতের সাথে দুইশ’ কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে। এ বিশাল সীমান্তের ভারতীয় অংশের আসাম প্রদেশের শিলচর, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ জেলা হয়ে দেশে ইয়াবা প্রবেশ করছে। বাংলাদেশের জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকার সুবিধা নিচ্ছে ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত দুই দেশের বেশ কয়েকজন ইয়াবা কারবারি।
ভারতের কাঁটাতারের বেড়া পার করতে পারলেই বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশ হতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। এতে জড়িয়ে পড়েছে দুই দেশের প্রায় ২০ জন মাদক কারবারি। তাদের সহায়তা করে সীমান্ত এলাকার অনেক বাসিন্দা। জকিগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকায় কমপক্ষে ২০টি স্পট, বিয়ানীবাজারের মইয়াখালি, কোণারগাঁও, বারোজনি, গজুকাটা, বড়গ্রাম, নয়াগ্রাম এলাকা এবং বড়লেখার বোবারথল দক্ষিণ ও উত্তর এলাকা দিয়ে ইয়াবা প্রবেশ করছে।
পুলিশ ও র্যাব সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্ত এলাকায় পৃথক অর্ধশতাধিক অভিযান চালিয়ে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ২ অক্টোবর বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ দুবাগের গজুকাটা এলাকা থেকে নুরুল ইসলাম ও মারুফ আহমদের কাছ থেকে ৮ হাজার পিস ইয়াবা এবং ২৯ ডিসেম্বর র্যাবের অভিযানে আসামের বাসিন্দা বিনন্দ নম শুদ্র ও বিয়ানীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুভাষ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে র্যাব ৬ হাজার ৭ শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।
এছাড়া সীমান্তবর্তী গজুকাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা ফকির আলী ও নুরুল ইসলাম বদইকে ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ। এর মধ্যে ফকির আলী ও বিনন্দ নম শুদ্র নামের দুজন ভারতীয় নাগরিক। ইয়াবা সিন্ডিকেটের অপর শীর্ষ ব্যক্তি সুভাষ দাস (জেলহাজতে) বাংলাদেশ থেকে ব্যবসার টাকা অবৈধপথে ভারতে পাচার করতেন।
সীমান্ত এলাকা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বৈত নাগরিক আব্দুস সালাম, আসামের ফকির আলী (জেলহাজতে), অজয় বড়ুয়া, বিনন্দ নম শুদ্র (জেলহাজতে), দ্বীপ এবং বাংলাদেশের মিজান আলী, জলাই, আব্দুল বাছিত, কটাই, জসীম, বলাই, ঝুমন, কাশিম, সাব্বির, হেলাল, ফারুক, হায়দর, সুভাষ দাসসহ (জেলহাজতে) ২০ জন ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত।
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনী শংকর কর বলেন, ইয়াবা পাচারের সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকার চিহ্নিত কিছু লোক জড়িত রয়েছে। পুলিশ তাদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। জড়িত বেশিভাগের অবস্থান ভারতের আসাম এলাকায়। কিছু লোক রয়েছে বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলার। কিন্তু এরা বেশিরভাগ সময়ে দেশের বাইরে অবস্থান করে।
জানা গেছে, মিয়ানমারের সাথে ভারতের মিজোরাম, মণিপুর ও নাগাল্যান্ড প্রদেশের সীমানা রয়েছে। এ তিন প্রদেশের মধ্যে মিজোরামের চম্পাই জেলায় ইয়াবা প্রবেশ করে মিয়ানমারের হাকা ও পালেতওয়া জেলা থেকে। মিজোরামের চম্পাই থেকে আইজল হয়ে আসামের শিলচর-করিমগঞ্জ জেলা হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশে ইয়াবা প্রবেশ করছে।
সরেজমিনে গজুকাটা ও কোণারগাঁও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ভারত ও বাংলাদেশকে বিভাজন করেছে কুশিয়ারা নদী। ভারতের কাঁটাতারের বাইরে থাকা নদীতে এসে পড়েছে পানি নিষ্কাশনের জন্য বড় বড় সুয়ারেজ। এসব সুয়ারেজ দিয়ে কাঁটাতারের ভেতর থেকে বৃত্তাকার দড়ি কপিকলের মাধ্যমে নদীর তল দেশ দিয়ে দুই প্রান্তে সংযোগ করা হয়েছে। যেকোনো একপাশ দিয়ে টান দিলে দড়ি ঘুরতে থাকে। ইয়াবা পাচারকারিরা গজুকাটা ও কোণারগাঁও এলাকায় এ কৌশলে ইয়াবা নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেন, ‘সিলেটকে মাদকমুক্ত রাখতে জেলার প্রত্যেক থানাকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইয়াবা প্রবেশ বন্ধ করতে সীমান্ত এলাকায় টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।’